‘সোহেল ভেরো এবং তারিন আপু অসাধারণ কিন্তু তোমাদের এই জুটি! এমন আরও কিছু বাউলগান উপহার দাও আমাদের!’ নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এমনই মন্তব্য করেছেন অভিনেত্রী মাসুমা রহমান নাবিলা।
এদিকে গানের সুরে সুরে পুরোনো দিনগুলো খুঁজে বেড়াচ্ছেন তারিন জাহান; সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়েছেন কণ্ঠশিল্পী সোহেল ভেরো। তারিন জাহান ও সোহেল ভেরোর এই দ্বৈত আয়োজনের পেছনে রয়েছে একটি অন্য রকম গল্প। এই গল্পের শুরু দেশের সবচেয়ে বড় ফোক রিয়েলিটি শো ম্যাজিক বাউলিয়ানার মাধ্যমে।
দেশের সবচেয়ে বড় ফোক রিয়েলিটি শো ম্যাজিক বাউলিয়ানা, এর তৃতীয় আসর শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর। বাংলার বাউলগান দিয়ে সারা বিশ্ব মাতাতে সান ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগের পৃষ্ঠপোষক স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড। আর আয়োজনটি সম্প্রচার করা হয় মাছরাঙা টেলিভিশনে। ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় সারা দেশ থেকে রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন ৪২ হাজারের বেশি প্রতিযোগী। সেখান থেকে সারা দেশে দীর্ঘ অডিশন ও সিলেকশনের মাধ্যমে মূল রাউন্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ পান মাত্র ২৬ জন। বিচারকদের বিচারে একে একে পাওয়া যায় সেরা পাঁচ প্রতিযোগীকে।
আর এই প্রতিযোগীরা হলেন লালমনিরহাটের শিরাজাম মুনিরা পাখি, কুষ্টিয়ার ইতি ইব্রাহিম, রাজবাড়ীর সোহেল ভেরো, টাঙ্গাইলের পলাশ চন্দ্র শীল এবং চট্টগ্রামের নয়ন শীল।
চ্যাম্পিয়ন বাছাই শুরুর আগেই সারা বিশ্বে শুরু হয় কোভিডের প্রকোপ। এমন পরিস্থিতিতে আড়ম্বরপূর্ণ গ্র্যান্ড ফিনালে আয়োজন করা সম্ভব হয় না। তবে ২২ অক্টোবর ২০২০ মাছরাঙা টেলিভিশনে এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ম্যাজিক বাউলিয়ানা ২০১৯–এর বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয় সেরা পাঁচের সবাইকে।
প্রত্যেকের হাতে তুলে দেওয়া হয় আড়াই লাখ টাকার প্রাইজমানি এবং পাঁচজনের আলাদা আলাদা মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করে টিভি ও ইউটিউবে সম্প্রচার করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ম্যাজিক বাউলিয়ানাদের সঙ্গে মিউজিক ভিডিওতে অংশ নেয় দেশসেরা পাঁচজন সেলিব্রেটি। যেখানে ইতি ইব্রাহিমের সঙ্গে গান গেয়েছেন এবং অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, সিরাজাম মুনিরা পাখির সঙ্গে ফজলুর রহমান বাবু, সোহেল ভেরোর সঙ্গে তারিন, পলাশ চন্দ্র শীলের সঙ্গে মেহের আফরোজ শাওন, নয়ন শীলের সঙ্গে কুসুম শিকদার।
তারিন জাহান ও সোহেল ভেরোর দ্বৈত কণ্ঠে গাওয়া ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ গানটির মিউজিক ভিডিও নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে শেয়ার করে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন অভিনেত্রী মাসুমা রহমান নাবিলা।
লোকসংগীত বাংলাদেশের বিদগ্ধজন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত সবার কাছে সমান জনপ্রিয়। আর এ গানের আবেদন অতীতেও যেমন ছিল, বর্তমানেও তেমন আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
বাউলগানের এই সুরসুধার যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা এবং নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো নেওয়া হয় দেশব্যাপী লোকসংগীতের প্রতিভা খুঁজে আনার উদ্যোগ ম্যাজিক বাউলিয়ানা। সারা দেশে ব্যাপক সাড়া পাওয়ার পর কাজ শুরু হয় বাউলগানকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার। বিশ্ব জানুক, কী দারুণ সুর আর দর্শন আছে এই বাংলার বাউলগানে, লোকসংগীতে। এরই ধারাবাহিকতায় আয়োজন করা হয় এশিয়ার সর্ববৃহৎ লোকসংগীত উৎসব ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট। এখানেই থেমে থাকা নয়। লোকসংগীতের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি অটুট রাখতে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যথাযথ আর্কাইভ করতে এবং শিল্পীদের সঠিক মূল্যায়ন করতে, তাদের পাশে দাঁড়াতে প্রয়োজন একটি ফাউন্ডেশনের। যাত্রা শুরু হয় সান ফাউন্ডেশনের। সান ফাউন্ডেশন বাংলার লোকসংগীতের লালন এবং প্রসার—সব দিকেই কাজ করে যাচ্ছে।