গানের সুর, নাচের ছন্দে জমকালো আনন্দসন্ধ্যা

করোনা মহামারির প্রবল পরাক্রম থেকে মুক্ত হয়ে আবার কর্মময়তায় স্পন্দিত হয়ে উঠছে জীবন। সেই গতিময়তাকে উদ্‌যাপন করতেই গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আনন্দঘন আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। এবার ছিল ২৩তম আসর।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিনোদনজগতের সেরা শিল্পীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। করোনার কারণে গত দুই বছর এই অনুষ্ঠান না হওয়ায় এবারের আয়োজনের প্রতি সবারই গভীর আগ্রহ ছিল। অনুষ্ঠানে তারকাদের উপস্থিতিও ছিল ব্যাপক। বিকেল থেকেই সুসজ্জিত বেশভূষায় তাঁরা অনুষ্ঠান কেন্দ্রে আসতে থাকেন। লালগালিচায় হেঁটে মিলনায়তনে প্রবেশের সময় বলেছেন এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে তাঁদের প্রত্যাশার কথা।

সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানের সূচনা করে মঞ্চে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে স্বাগত বক্তব্য দিতে আহ্বান জানান সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক। মতিউর রহমান গত দুই বছরের অবরুদ্ধকালের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আমরা জানতাম না ঘর থেকে বের হতে পারব কি না। করোনা নিয়ে ভয়, উদ্বেগ ছিল। ছিল মৃত্যুর ঝুঁকি। পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্নতা ঘিরে রেখেছিল আমাদের। অনেক প্রিয়জন, অনেক গুণী মানুষকে আমরা হারিয়েছি। তবু শেষ পর্যন্ত আমরা থেমে যাইনি। এখন সময় এগিয়ে যাওয়ার, উদ্‌যাপন করার।’ তিনি বলেন, ‘শিল্পীরা আমাদের বরাবর পথ দেখিয়েছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন।’ তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রয়াত গুণীজনদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের আহ্বান জানান তিনি।

এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘গত দুই বছর অনুষ্ঠান না হলেও মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার প্রদানের কার্যক্রম বন্ধ ছিল না। প্রথম আলো ও স্কয়ারের কর্মীরা বিজয়ীদের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন। বিনোদনজগতের শিল্পীরা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশ থেকেও আমাদের জন্য সুনাম বয়ে আনছেন, এটা গৌরবের বিষয়। তাঁদের কাজের স্বীকৃতি ও অনুপ্রেরণা দিতে প্রথম আলোর সঙ্গে স্কয়ারের এই যৌথ আয়োজন অব্যাহত থাকবে।’

এরপর শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। নিভে যায় মঞ্চের আলো। ‘তোর মনের মাঝে কে’ গানের সঙ্গে জমকালো নাচ নিয়ে মঞ্চে আসেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও নায়িকা নুসরাত ফারিয়া। ঈগল ড্যান্সের শিল্পীদের সঙ্গে তাঁদের মনমাতানো নাচের পর মঞ্চে আসেন আরেক উপস্থাপক চিত্রনায়ক রিয়াজ। তাঁরাই তিনজন ছিলেন পুরো অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের ভূমিকায়।

প্রথমে ছিল ‘আজীবন সম্মাননা’ প্রদান। পরে ‘সমালোচক পুরস্কার’ এবং শেষে ‘তারকা জরিপ পুরস্কার’। এই বিভাগগুলোতে সেরা নাটক, চলচ্চিত্র ও ওয়েব সিরিজের সেরা চিত্রনাট্য, সেরা নির্দেশক, অভিনেতা, অভিনেত্রী, সেরা নবাগত শিল্পী এবং সেরা পুরুষ ও সেরা নারী সংগীতশিল্পীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কার প্রদানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল নৃত্য, কৌতুক, নানা রকমের সরস কথোপকথনের বুননে আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

এবার আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয় দেশের দুই গুণী শিল্পী রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমীনকে। নাম ঘোষণার পরপরই দর্শকেরা করতালিতে তাঁদের অভিনন্দিত করেন। মঞ্চে বড় ডিজিটাল পর্দায় তাঁদের জীবনের নানা মুহূর্ত তুলে ধরা হয়।

আজীবন সম্মাননার পর শুরু হয় বিভিন্ন বিভাগের সেরাদের পুরস্কার বিতরণের পালা। প্রতিটি পর্বের শুরুতে বড় পর্দায় মনোনীত ব্যক্তিদের কাজের অংশবিশেষ দেখানো হয়। তারপর তারকাজগতের অতিথিরা মঞ্চে এসে বিজয়ীর নাম ঘোষণা ও পুরস্কার প্রদান করেন। প্রথমে ছিল সমালোচক বিভাগের পুরস্কার। প্রথম দফা পুরস্কার বিতরণের পর আবার জমকালো নৃত্য। তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশোর সঙ্গে নাচের ছন্দে তাল মিলিয়েছেন জনপ্রিয় তিন অভিনেত্রী। সাবিলা নূর শুরু করেন ‘আইলা রে নয়া দামান’ গান দিয়ে। তানজিন তিশা আসেন ‘নিশা লাগিল রে’ নিয়ে এবং মেহজাবীন চৌধুরী নৃত্য পরিবেশন করেছেন ‘তোমরা দেখো গো আসিয়া’ গানের সঙ্গে।

পরের পরিবেশনাটি ছিল একটু অন্য রকম। সাজু খাদেম মঞ্চে আসেন, তাঁর সঙ্গে আসেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, নাসরিন আক্তার নিপুণ ও সংগীতশিল্পী ইমরান। সাজু খাদেমের সঙ্গে তাঁরা সরস কথোপকথনে মেতে ওঠেন। বাঁধন তাঁর রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমা ও কান চলচ্চিত্র উৎসবের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। নিপুণ বক্তব্য দিয়েছেন রাজনীতিকদের অনুকরণে। ইমরান তাঁর প্রিয় শিল্পী হৃদয় খান ও হাবিব ওয়াহিদের কণ্ঠ অনুকরণ করে তাঁদের কয়েকটি গানের চরণ গেয়ে শোনান। পরে সাজু খাদেম প্রয়াত গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘ও সখিনা’ গানের দুটি চরণ পরিবেশন করেন।

এরপর আবার পুরস্কার বিতরণী। মাঝে তিন সঞ্চালকের খুনসুটি। আর বিদ্যা সিনহা মিম ও সিয়াম আহমেদের জমজমাট নৃত্য। শিল্পী পান্থ কানাই ও অনিমেষ রায়ের গাওয়া কোক স্টুডিওর গান ‘নাসেক নাসেক’ এবং ‘দোল দোল দুলুনি’ গানের সঙ্গে আলোকচ্ছটা ছড়ানো দলবদ্ধ এই নাচের পর ছিল গানের সেরা পুরুষ ও নারী শিল্পীর পুরস্কার বিতরণ পর্ব।

গান-নাচের পর আবার কৌতুক। তবে এবার ভিন্ন আঙ্গিকে। ‘মীরাক্কেল’খ্যাত কৌতুক অভিনেতা জামিল, সজল ও শাওন সাম্প্রতিক তেলসংকট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে একটি পরিবেশনা উপস্থাপন করেন।

সাংস্কৃতিক পর্বের সর্বশেষ পরিবেশনা ছিল সমবেত গান। সামিনা চৌধুরীর নেতৃত্বে নিশিতা বড়ুয়া, রন্টি দাস, সুকন্যা মজুমদার, অবন্তী সিঁথি, সুস্মিতা সাহা, নোশিন তাবাস্‌সুম, মারুফা জান্নাত ও ফাবাশির জাহান খান গেয়ে শোনান সম্প্রতি প্রয়াত গীতিকবি কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা ও লাকী আখান্দের সুর করা গান ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে রাতের নির্জনে’। এই গানের সুর কানে নিয়েই আনন্দের আসর ছেড়ে ঘরের পথ ধরেন দর্শক-শ্রোতারা।

Source:Click Here